গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেবেন কী করে

গরমে ত্বকের তেলতেলে ভাব সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। আর এ জন্য দায়ী ত্বকের নিচে অবস্থানকারী সিবেসিয়াস গ্রন্থি। এটি শরীরের মেদ বা চর্বি থেকে সিবাম বা তেল উৎপন্ন করে প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে। গরমে এই গ্রন্থি বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ ত্বকে বেশি সিবাম উৎপন্ন হয়। যাঁদের ত্বক এমনিতেই তৈলাক্ত, তাঁদের জন্য এটা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়ে। ত্বকের এই অতিরিক্ত তেল বাইরের ধুলাময়লার সংস্পর্শে এসে ত্বকের পোরস বা ছোট ছোট ছিদ্রকে বন্ধ করে দেয়। দেখা যেতে শুরু করে ব্রণ। কিশোরী হন কিংবা মধ্যবয়স্ক, গরম এলেই তৈলাক্ত ত্বকে দেখা দিতে থাকে ব্রণ। তবে সমস্যা বুঝে নিয়মিত যত্ন ও পরিচর্যায় সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে জানান রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা।

গরমে যে ধরনের সমস্যা হয়

ত্বকের অতিরিক্ত তেল আর মৃত কোষের মিশ্রণে সৃষ্টি হয় হোয়াইটহেডস। কখনো কখনো অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে কিংবা চুলের ফলিকল কেরাটিনোসাইটের কারণে এই হোয়াইটহেডস কালো বা বাদামি রং ধারণ করে হয়ে যায় ব্ল্যাকহেডস। এগুলোকেও একধরনের ব্রণই বলা যায়। অতিরিক্ত তেলে ত্বক সাময়িক চকচক করলেও গরম আর রোদে তৈলাক্ত ত্বক বেশি পুড়ে যায়, হয়ে যায় নিষ্প্রভ। কখনো কখনো ছোপ ছোপ দাগও দেখা দেয়। সমস্যাগুলোর সমাধান দিয়েছেন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক এবং চুল ও ত্বকবিশেষজ্ঞ এস এম বখতিয়ার কামাল। তিনি বলেন, তৈলাক্ত ত্বক খারাপ নয়। এ ধরনের ত্বকে বার্ধক্য দেরিতে দেখা দেয়। ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

বারবার মুখ ধোয়া যাবে না

স্বাভাবিকভাবে ত্বক যে তেল উৎপন্ন করে, তা ত্বকের ক্ষতির চেয়ে উপকারই করে বেশি। বারবার মুখ ধুলে এই তেল সাময়িকভাবে কমে যায়। তাতে সিবেসিয়াস গ্রন্থি ধরে নেয় যে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে যাচ্ছে। তখন সে আরও বেশি তেল উৎপন্ন করে। এর ফলে ত্বক আরও বেশি তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। বখতিয়ার কামাল বলেন, দিনে দুবারের বেশি মুখ ধোয়া উচিত নয়। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল কিংবা সালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত কোনো ফেসওয়াশ দিয়ে ভালো করে মুখ ধুতে হবে। এতে ত্বকের ময়লা দূর হবে, স্বাভাবিক পিএইচের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। চশমার বাক্সে চশমা পরিষ্কারের জন্য খুব নরম ফ্লানেল কাপড় দেওয়া থাকে। তৈলাক্ত ত্বকের ব্যক্তিরা এই কাপড় দিয়ে মুখ মুছতে পারেন। মুখ তেলতেলে হয়ে গেলে এই কাপড় ভিজিয়ে দুই ঘণ্টা পরপর মুখ মুছে নিলে তৈলাক্ত ভাব কমে যাবে।

ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে হবে

এক্সফোলিয়েশন হচ্ছে সৌন্দর্যের আদি রহস্য। মিসরের রানি ক্লিওপেট্রা টক দই দিয়ে গোসল করতেন। কারণ, টক দইয়ে আছে ল্যাক্টিক অ্যাসিড। ফরাসি নারীরা ওয়াইন দিয়ে মুখ ধুতেন, যাতে আছে গ্লাইকলিক অ্যাসিড। আমাদের দেশেও নারীরা অনেক ধরনের প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করেন। এগুলোর মূল কাজই হচ্ছে এক্সফোলিয়েট বা ত্বকের ওপরের মৃত কোষ অপসারণ। তৈলাক্ত ত্বকের মৃত কোষ একবার হলেও দূর করা উচিত।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা কি ঠিক?

তৈলাক্ত ত্বক তো এমনিতেই তেলতেলে, সেটা আবার ময়েশ্চারাইজার করার কী দরকার? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই আছে। তবে জেনে অবাক হবেন যে ত্বক যত আর্দ্র রাখবেন, তত ভালো থাকবে। তৈলাক্ত ত্বক আর্দ্র রাখতে ক্রিমভিত্তিক নয়, বরং ব্যবহার করুন জেলভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার। সানস্ক্রিন শুধু সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকেই বাঁচায় না, এটি ত্বকে বিদ্যমান কালো-বাদামি দাগগুলোকে আরও গাঢ় হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে। তাই তৈলাক্ত ত্বকের উপযোগী হালকা এবং নন-কমেডোজেনিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। পাউডার–জাতীয় সানব্লক ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হবে।

ব্লটিং পেপারের ব্যবহার

ব্লটিং পেপারকে জাদুকরী কাগজ বললে ভুল হবে না। ত্বকের ওপর অতিরিক্ত তেল শুষে নিতে সক্ষম এই কাগজ। তৈলাক্ত ত্বক নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই কাগজের জুরি নেই। বাইরে গেলে ব্যাগ কিংবা পকেটে এটি রেখে দিন। প্রয়োজনমতো ব্যবহার করুন।

তৈলাক্ত ত্বক খুব সহজে ময়লা হয়। তাই এ ধরনের ত্বক ভালো রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার ও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, বলেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। ঘরেই আছে, এমন খুব সাধারণ কিছু উপকরণ দিয়ে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেওয়া সম্ভব। শসার বরফ ব্যবহারে এই প্রচণ্ড গরমে ত্বক কিছুটা আরাম পাবে। এতে রোদে পোড়া ভাবও দূর হবে। সপ্তাহে দুই দিন বেসনের সঙ্গে টক দই মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কিছুটা হলেও কমবে। কারণ, বেসন অতিরিক্ত তেল শুষে নিতে পারে। ডিমের সাদা অংশও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেশ ভালো। এতে পোরস কিছুটা হলেও কমে যায়। ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় মালিশ, ত্বক দেখায় উজ্জ্বল। কোলাজেন বৃদ্ধি করে ও নমনীয়তা ধরে রেখে ত্বককে রাখে সুন্দর।

Source: https://www.prothomalo.com/lifestyle/beauty/nfrdppib3n

Recommended Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *