আইইএলটিএস নিয়ে ১০ প্রশ্নের উত্তর

‘ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম’কে সংক্ষেপে বলা হয় আইইএলটিএস। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ে এই পরীক্ষা বেশ জনপ্রিয়। ভিনদেশে উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির আবেদনে পূর্বশর্ত হিসেবে আইইএলটিএস স্কোরের কথা উল্লেখ থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে আইইএলটিএস–সম্পর্কিত ১০টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন জাহিদ হোসাইন খান

১. আইইএলটিএস পরীক্ষার নিয়ম কী?

স্পিকিং (বলা), লিসেনিং (শোনা), রাইটিং (লেখা) ও রিডিং (পড়া)—এই চার অংশ মিলিয়ে নেওয়া হয় আইইএলটিএস পরীক্ষা। পরীক্ষাটি দুই ধরনের—একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং। উচ্চশিক্ষার জন্য একাডেমিক মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। আর কারিগরি বিষয়, অভিবাসন, প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য ‘জেনারেল ট্রেনিং মডিউল’। দুই ধরনের মডিউলেই লিসেনিং, রিডিং, রাইটিং ও স্পিকিং—চারটি অংশ থাকে। প্রতিটি অংশে থাকবে ৯ নম্বর। চারটি অংশের গড় করে আপনাকে একটি ‘স্কোর’ বা নম্বর দেওয়া হবে।

২. ‘স্পিকিং’ অংশে কী নিয়ে কথা বলতে হয়?

‘স্পিকিং টেস্ট’–এর দৈর্ঘ্য সাধারণত ১১-১৪ মিনিট। তিনটি অংশে ‘ইংরেজিতে কথা বলা’র পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম অংশে প্রশ্নকর্তা সাধারণত পরিবার, কাজ, পড়াশোনা, শখ—এ ধরনের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। দ্বিতীয় অংশে আপনাকে একটি নির্ধারিত বিষয় দেওয়া হবে, যে বিষয়ে আপনাকে প্রায় দুই মিনিট কথা বলতে হবে। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অবশ্য আগে এক মিনিট সময় পাবেন। তৃতীয় অংশের আলাপ হবে মূলত দ্বিতীয় অংশে আপনি যা বলেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে। প্রশ্নকর্তা আপনাকে নানা রকম প্রশ্ন করবেন, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

৩. স্পিকিং অংশের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেব?

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সাদিয়া নূসরাত সিদ্দিকার সঙ্গে আমরা কথা বলি ১ জুন। আইইএলটিএসে সাদিয়ার স্কোর ছিল ৮.৫। স্পিকিংয়েও তিনি ৯-এর মধ্যে ৮.৫ পেয়েছেন। সাদিয়া বলেন, ‘স্পিকিং অংশের জন্য আগে নিজেকে উপস্থাপন করা শিখতে হবে। আপনার নিজের সম্পর্কে কয়েকটি পয়েন্ট বা বিষয় একটি কাগজে লিখে নিয়ে চর্চা করতে পারেন। জড়তা দূর করতে হবে। আমি যেমন আমার বন্ধুদের সাহায্য নিয়েছিলাম। ওদেরকে বলতাম, আমাকে প্রশ্ন করতে। আমি সেসব প্রশ্নের উত্তর ইংরেজিতে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। পরীক্ষার আগে যদি কিছু মক টেস্টে (অনুশীলন পরীক্ষা) অংশ নিতে পারেন, তাহলে খুব ভালো হয়।’

৪. ‘লিসেনিং’ অংশে কী আসে?

লিসেনিং অংশে আপনাকে চারটি অডিও শোনানো হবে। কোনো অডিওতে হয়তো একাধিক মানুষের কথোপকথন থাকবে। আবার কোনোটায় আপনি একজনের কণ্ঠস্বরই শুনতে পাবেন, যিনি কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় বর্ণনা করবেন। লিসেনিং অংশে বেশ কিছু বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকে। কোথাও কোথাও এক শব্দ বা তিন শব্দে উত্তর দিতে বলা হয়। সব রকম উত্তর দেওয়ার জন্যই আপনাকে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।

৫. লিসেনিংয়ের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেব?

আইইএলটিএস পরীক্ষায় লিসেনিংয়ে ৮.৫ স্কোর করেছেন আহসান রাজীব। তাঁর পরামর্শ, লিসেনিংয়ের জন্য কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত আইইএলটিএস ১১-১৭ বইগুলো চর্চা করতে পারেন। লিসেনিংয়ের প্রথম অংশে সাধারণত বিমানবন্দর, ব্যায়ামাগার, স্টেশন বা হোটেলের বুকিং দেওয়ার সময় যে ধরনের কথোপকথন হয়, সে রকম একটা কিছু আপনাকে শোনানো হবে। দ্বিতীয় রেকর্ডিংয়েও সাধারণত দুজনের কথোপকথন থাকবে। চারটি অংশের জন্যই ইউটিউবে প্রচুর নমুনা পাবেন। সেগুলো শুনে শুনে চর্চা করতে পারেন। এ ছাড়া পডকাস্ট শুনুন, নিউজ শুনুন। লিসেনিংয়ে ৯ পাওয়া সাদিয়ার মত, প্রশ্নপত্রে দেওয়া নিয়মগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করতে হবে। যেখানে দুটি শব্দ লিখতে বলা হচ্ছে, সেখানে কোনোভাবেই দুটির বেশি ব্যবহার করবেন না।

৬. রিডিংয়ে কী আসে?

৩টি অনুচ্ছেদ পড়ে ৬০ মিনিটের মধ্যে আপনাকে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এর মধ্যে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন আছে, শূন্যস্থান পূরণ আছে। নির্ধারিত অনুচ্ছেদ পড়ে ‘সত্য, মিথ্যা বা উল্লেখ নেই’—এমন মন্তব্যও করতে হবে। ‘ম্যাচিং সেনটেন্স এন্ডিংস’ ধরনের প্রশ্নে অনুচ্ছেদ পড়ে বাক্য শেষ করতে হবে। ‘সেনটেন্স কমপ্লিশন’ ধরনের প্রশ্নও থাকতে পারে। এ ছাড়া কোনো একটা অনুচ্ছেদ পড়ে আপনাকে টেবিল বা ফ্লোচার্ট পূরণ করতে হতে পারে।

৭. রিডিংয়ের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেব?

অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস বৃত্তি পেয়ে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক পলিসি বিষয়ে মাস্টার্স করছেন জোবায়ের হাসান। তিনি বলেন, রিডিংয়ের প্রস্তুতির শুরুতে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত আইইএলটিএস ১৫-১৬-১৭ ৩টা বই সংগ্রহ করে ফেলুন। বইয়ে দেওয়া অনুশীলনীগুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমাধান করলেই অনেকটা এগিয়ে যাবেন। প্রতিটা প্রশ্ন ও অপশনের মূল শব্দ বা ‘কি ওয়ার্ড’ পেনসিল দিয়ে দাগিয়ে নিতে পারেন। স্কিম রিডিং বা টুকরো টুকরো করে পড়া বলে একটা ধারণা খুব জনপ্রিয়। চেষ্টা করুন পুরো নিবন্ধটাই দ্রুত পড়ে ফেলতে। তবে সাধারণত অনুচ্ছেদের সঙ্গে মিলিয়েই প্রশ্নের ধারাবাহিকতা থাকে। একটু একটু পড়ে, একটা একটা উত্তর করতে পারেন। মিনিট বিশেক হয়ে গেলে পরের কম্প্রিহেনশনে চলে যাবেন। সময় নষ্ট করবেন না। রিডিংয়ে ৯.০ পাওয়া সাদিয়ার মন্তব্য, ‘খুব সাধারণ বিষয়ও হয়তো শব্দের মারপ্যাঁচের কারণে অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না। আবার কিছু কিছু প্রশ্ন করাই হয় দ্বিধায় ফেলার জন্য। সে জন্য বেশি বেশি অনুশীলন করার কোনো বিকল্প নেই।’

৮. রাইটিং অংশের পরীক্ষায় কী থাকে?

একাডেমিক রাইটিংয়ে ৬০ মিনিটে ২টি অংশ লিখতে হয়। প্রথম অংশে গ্রাফ, টেবিল, চার্ট বা ডায়াগ্রাম–সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ে আপনাকে লিখতে হবে। গ্রাফ বা টেবিলে উল্লেখিত তথ্যের ব্যাখ্যা ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে হয় ১৫০ শব্দের মধ্যে, লিখতে হবে। পরীক্ষার দ্বিতীয় অংশে ৪০ মিনিটে ২৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর লিখতে হয়। আপনার ভোকাবুলারি কতটা সমৃদ্ধ, ইংরেজি ভাষা আপনি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন কি না, রাইটিং অংশে তা-ই পরীক্ষা করা হয়।

৯. রাইটিংয়ের জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নেব?

সাদিয়া বলেন, আইইএলটিএস-এর ‘রাইটিং’ অংশটি সাধারণ লেখালেখির চেয়ে একটু আলাদা। অনেকে দেখা যায় ভালো গল্প লেখেন, কিংবা ইংরেজি ভালো লিখতে পারেন, কিন্তু রাইটিংয়ে ভালো স্কোর করতে পারেন না। কারণ, এ ক্ষেত্রে লেখার একটা কৌশল আছে। শুধু সঠিক উত্তর লিখলেই হয় না, গুছিয়ে লিখতে হয়। অনলাইনে কিংবা কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসের বই থেকে কয়েকটি নমুনা পড়লেই আপনি ধারণা পেয়ে যাবেন।

১০. কোথায়, কীভাবে পরীক্ষা দেব?

ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ ও আইডিপি এডুকেশন থেকে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে। প্রতি মাসেই নির্ধারিত বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্দিষ্ট তারিখে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কম্পিউটার–নির্ভর (কম্পিউটার বেইজড) বা কাগজনির্ভর (পেপার বেইজড)—দুই ধরনের পরীক্ষা দিতে পারেন। ‘স্ট্যান্ডার্ড আইইএলটিএস’ এর খরচ ২০ হাজার ২৫০ টাকা। কম্পিউটার বেইজড আইইএলটিএস পরীক্ষার স্কোর তিন থেকে পাঁচ দিনেই পাওয়া যায়। পেপার বেইজড পরীক্ষায় স্কোর পেতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে।

Source: https://www.prothomalo.com/lifestyle/kt0uby7f4m

Recommended Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *