অনিদ্রার সমস্যার অনেকেই ভোগেন। শুধু বয়স্করাই নন বরং কমবয়সীদের মধ্যেও এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণেই ঘুমে প্রভাব পড়ে। এছাড়া অতিরিক্ত ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারেও ঘুম কমাতে পারে।
অনিদ্রায় যারা ভোগেন তাদের সারারাত এপাশ ওপাশ করেই কাটে। শত চেষ্টা করেও চোখে ঘুম আসে না। এমন পরিস্থিতে অনেকেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আবার অনেকে দৈনিক স্লিপিং পিল খেয়ে ওষুধে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।
চাইলে অনিদ্রা দূর করতে ঘরোয়া কয়েকটি কৌশল অনুসরণ করতে পারেন। জেনে নিন অনিদ্রার সমস্যা কাটাতে কী করবেন?
ক্যাফেইনজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন
ক্যাফেইনজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চা, কফি, কোমল পানীয় আর এনার্জি ড্রিঙ্কস খেলে অনিদ্রার সমস্যা আরও বাড়বে। এর কারণ হলো ক্যাফেইন ঘুম আসতে দেয় না। আবার ঘুম আসলেও তা গভীর হতে দেয় না।
বিশেষ করে ঘুমের ৬ ঘণ্টা আগে এগুলো খাওয়া যাবে না। রাতে ভালো ঘুমের জন্য রাতে গরম দুধ পান করতে পারেন। কারণ দুধে আছে ট্রিপ্টোফ্যান। গবেষণায় দেখা গেছে, এটা ভালো এবং লম্বা সময় ধরে ঘুম হতে সাহায্য করে।
‘ওয়াইন্ড ডাউন টাইম’
নিদ্রাহীনতার রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞরা ‘ওয়াইন্ড ডাউন টাইম’ নামক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। ১ ঘণ্টা নিজের জন্য সময় বরাদ্দ রাখার মাধ্যমে বই পড়া, ডায়েরি লেখা, গরম পানি দিয়ে গোসল করা, মনে প্রশান্তি আনে এমন শ্রুতিমধুর কিছু শোনার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আর যেসব কাজ করতে মানা করা হয়, সেগুলো হলো ঘুমানোর আগে টিভি দেখা, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা। কারণ এই যন্ত্রগুলোর স্ক্রিনের উজ্জ্বল আলো মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
‘স্টিমুলাস কন্ট্রোল’
যাদের বিছানায় শুয়ে থাকার পরও ঘুম আসে না তাদের জন্য ‘স্টিমুলাস কন্ট্রোল’ নামক চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য হলো আপনার মস্তিষ্ক যাতে শোবার ঘর ও বিছানা দেখলে ঘুমের কথা চিন্তা করে। শোবার ঘরের সঙ্গে যাতে অনিদ্রার কথা মাথায় না আসে।
তবে ঘুম না আসলে জোর করে বিছানায় শুয়ে থাকবেন না। যদি ১০-২০ মিনিট সময় ধরে শুয়ে থেকেও ঘুম না আসে তাহলে বিছানা থেকে উঠে পাশের রুমে গিয়ে নিজেকে রিল্যাক্স রাখুন। তবে মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার করবেন না; বই পড়তে পারে। তারপর ঘুম আসলেই কেবল বিছানায় ফেরত যাবেন।
ঘড়ির দিকে তাকাবেন না
ঘুম না হলে অনেকেই বারবার ঘড়িতে সময় দেখে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এটি ঘুমের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই তাদেরকে ঘড়ির দিকে না তাকানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি মোবাইল ফোন বালিশের নিচে না রেখে একটু দূরে রেখে ঘুমাবেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকের মনে ঘুম নিয়ে এমন কিছু ধারণা থাকে যা দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে তোলে। যেমন- প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে বা রাতে ভালো ঘুম না হলে কালকে কাজ করতে পারব না, পরীক্ষায় ফেইল করবো এসব ভাবনা থেকে অনিদ্রার সমস্যা আরও বাড়ে।
খাওয়ার পরপরই ঘুমাবেন না
ঘুমানোর আগে পেট ভরে অতিরিক্ত খেলে ঘুম ভালো নাও হতে পারে। যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের জন্য ঘুমানোর ৩-৪ ঘণ্টা আগেই রাতের খাবার সেরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ধূমপান এড়িয়ে চলুন
ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ নিকোটিন একটি উত্তেজক পদার্থ। যারা ধূমপান করে তারা সহজে ঘুমাতে পারে না। ঘন ঘন ঘুম ভেঙে জেগে ওঠেন এবং প্রায়ই তাদের ঘুম ব্যাহত হয়। যদি ধূমপানে অভ্যস্তও হয়ে থাকেন, তাহলে ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে ধূমপান থেকে বিরত থাকবেন।
শরীরচর্চা ও ধ্যান
নিয়মিত শরীরচর্চা ও ধ্যান অনিদ্রার সমস্যা দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। শরীর সচল রাখলে রাতে ঘুম ভালো হয়। তবে ঘুমানোর ৩ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম পরিহার করতে হবে।
আর অবশ্যই প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। এর জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো আর ঘুম থেকে জেগে ওঠা প্রয়োজন। জেগে ওঠার সময়টা প্রতিদিন একই রাখার চেষ্টা করবেন।
পরামর্শ: (ডা.তাসনিম জারা, চিকিৎসক, এনএইসএস ইংল্যান্ড; স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়; কো-ফাউন্ডার এবং প্রধান মেডিকেল অফিসার, সহায়।)
Source: https://www.jagonews24.com/lifestyle/news/862404